গবেষণা হলো সমাজের জটিল সমস্যাগুলোর মূল কারণ চিহ্নিত করে এবং সেগুলোর সমাধানের পথ দেখানোর বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্রিয়া। এটি তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক এবং শিক্ষাখাত, স্বাস্থ্যখাত, অর্থনীতি বা পরিবেশগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের মাইক্রোফিন্যান্স গবেষণা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
প্রথমত, গবেষণার মাধ্যমে সমাজের প্রাসঙ্গিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যায়। Creswell (2014) এর Research Design বইতে বলা হয়েছে, কীভাবে গুণগত, পরিমাণগত এবং মিশ্র পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণা সমাজের সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিন রেভল্যুশন (সবুজ বিপ্লব) এর মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল শস্যের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, যা শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি বরং দারিদ্র্য দূরীকরণেও ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গবেষণা দেখাতে পারে কোন রোগ বেশি প্রকট, তার কারণ কী, এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়।
দ্বিতীয়ত, গবেষণা শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ বা বিশ্লেষণের জন্য নয়, এটি সমাজে প্রভাব ফেলার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। গবেষণা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাভাবনার পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, নারী স্বাস্থ্যে মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত ট্যাবুগুলো ভাঙা সম্ভব হয়েছে। এটি নারীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক সমতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। Mertens (2009) তার Transformative Research and Evaluation বইতে উল্লেখ করেছেন যে, গবেষণা কেবলমাত্র একটি তাত্ত্বিক অনুশীলন নয়, বরং এটি সমাজের প্রান্তিক ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করার একটি হাতিয়ার। এটি সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার একটি কার্যকর উপায়।
পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ, লিঙ্গভিত্তিক অসমতা নিয়ে গবেষণা বারবার দেখিয়েছে যে নারীদের প্রতি আরোপিত সামাজিক বিধিনিষেধ সমাজের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। এই ধরণের গবেষণা মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন এনে সমতার ভিত্তিতে একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়তে সাহায্য করে।
তৃতীয়ত, গবেষণা নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। শিক্ষাখাত, কৃষি, অর্থনীতি বা প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গবেষণার ফলাফল নীতিনির্ধারকদের সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে। উদাহরণস্বরূপ, পোলিও নির্মূল কর্মসূচি গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন বিশ্বব্যাপী পোলিওর মতো মহামারি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন ও সোলার এনার্জি নিয়ে গবেষণা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার ঘটিয়েছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম গবেষণার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে, যা অসংখ্য মানুষকে দারিদ্র্যের চক্র থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করেছে।
সর্বশেষে, গবেষণা কেবল সমস্যা সমাধানেই নয়, নতুন সুযোগ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, পরিবেশ সুরক্ষা, এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও, জনস্বাস্থ্য গবেষণা স্থানীয় সীমা ছাড়িয়ে বৈশ্বিক স্তরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, টেকসই নির্মাণ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা নগর উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধান প্রদান করেছে। এছাড়া, পরিবেশগত গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল সরবরাহ করেছে।
লিখেছেন _
সিনহা আক্তার
কন্টেন্ট লিড এবং জুনিয়র গবেষণা সহকারী,
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইনোভেটিভ হেলথ রিসার্চ
মনোবিজ্ঞান (স্নাতক) বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ।
Our Address
Mirpur, Dhaka-1216, Bangladesh
(Currently Online)
Our Activities
Research Internship Program
Basics of Research Methodology
Data Collection Tools
Data Analysis with SPSS